পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট করতে এখন আর পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না! নতুন নিয়ম ও বিস্তারিত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন।

এখন থেকে পাসপোর্ট করতে আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে না। ডিসি সম্মেলনে পাসপোর্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন পাসপোর্ট পাওয়া NID Card এবং জন্ম নিবন্ধনের মতোই নাগরিক অধিকার।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পরদিনই সরকার পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক থাকার নিয়ম বাতিল করতে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তথ্য যাচাই করেই পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন
পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন Preview Image [Thumbnail]

সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করলেই, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।

এর আগে, রবিবার ডিসি সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা এই পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। এরপর সোমবার, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ভিত্তিতে নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ।

পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণের উদ্যোগ

সরকার পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদান, যা পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনবে।

নতুন প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ:

  1. জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট:
    • জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করেই পাসপোর্ট প্রদান করা হবে, ফলে আবেদনকারীদের আলাদা করে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
  2. অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ:
    • যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তাদের ক্ষেত্রে এনআইডির পরিবর্তে জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করেই পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
  3. বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুবিধা:
    • প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই অনলাইনে যাচাই করা জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
  4. পাসপোর্ট পুনঃইস্যু সহজতর করা:
    • পাসপোর্ট পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে মৌলিক তথ্য (নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান) পরিবর্তন না হলে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করেই পাসপোর্ট প্রদান করা যাবে।
  5. তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন গণ্য করা হবে:
    • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন ডেটাবেজের সঙ্গে পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য যাচাই করা হলে তা “বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ, ১৯৭৩-এর ৫(২) ধারার অধীনে প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে” বলে বিবেচিত হবে। ফলে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের সুযোগ কমে আসবে।
  6. পাসপোর্ট সেবা ও এর গুরুত্ব:
    • বাংলাদেশের এক কোটির বেশি নাগরিক বিদেশে কর্মরত। প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার বাংলাদেশি নতুন করে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান। এছাড়া উচ্চশিক্ষা, স্থায়ী বসবাসসহ বিভিন্ন কারণে বিপুল সংখ্যক নাগরিকের পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়।
    • প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার আবেদন গ্রহণ ও ২৫-২৮ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
    • বর্তমান ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় অনলাইনে আবেদন দাখিল করা, ফি পরিশোধ করা, নির্ধারিত দিনে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান এবং পরে অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে।
    • অনেক সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়া বা অতিরিক্ত কাগজপত্র যাচাইয়ের কারণে আবেদনকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় এসব জটিলতা কমে আসবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া কি পাসপোর্ট করা সম্ভব?

হ্যাঁ, বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর পর পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট করা সম্ভব। তবে সাধারণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগতে পারে।

কোন কোন পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই?

ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না। তবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হতে পারে।

পাসপোর্ট করতে কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন?

পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে), এবং ফি জমার রশিদ প্রয়োজন হয়।

ই-পাসপোর্ট ও MRP পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য কী?

ই-পাসপোর্টে ইলেকট্রনিক চিপ থাকে এবং এটি আধুনিক ও নিরাপদ। MRP (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) সাধারণত পুরাতন ধাঁচের হয় এবং এতে চিপ থাকে না।

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট কতদিনে পাওয়া যাবে?

ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণত ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। জরুরি আবেদন করলে ২-৩ দিনের মধ্যেও পাসপোর্ট পাওয়া যেতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন এড়াতে কী করতে হবে?

পুলিশ ভেরিফিকেশন এড়াতে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন। কারণ ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয় না।

Post a Comment

Important Notice!Please comment respectfully! Irrelevant, hateful, or spam comments will be deleted, and repeated violations may result in a permanent ban. Comments are allowed in Bengali, English, or Hindi. Thank you!